বাড়ি নির্মাণের সময় লে আউট দেওয়ার সহজ নিয়ম।

মনে করুন আপনি একটি কম্পানির একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার।কতৃপক্ষ আপনাকে একটি প্রজেক্টের পাইলিং এর লে আউট দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু লে আউট দেওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা আপনার নেই । এমতাবস্থায় সবার বেলায় একটু স্ট্রেস কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। গুরুজনদের ওছিয়ত হলো যে কোন কাজই হোকনা কেন সাহস করে ধরে ফেলতে হবে। বিচলিত হলে চলবেনা। একটা স্লোগান আছে "আমি_পারিনা_আমরা_পারি" আপনি কি পারেন না পারেন তা কন্ট্রাকটর/ফোরম্যান পন্ডিত মশাইদের বুঝতে দিবেন না। কেননা আপনার দুর্বলতা তারা বুঝতে পারলে আপনাকে অবমূল্যায়ন করবে।আপনি তাদের কাছে হাসি তামাশার পাত্র হবেন। কারণ মিস্তিরিদের জন্মগত ডায়লগ ইন্জিনিয়াররা_কিছুই_জানেনা।
বাড়ি নির্মাণের সময় লে আউট দেওয়ার সহজ নিয়ম।

তাই আপনাকে কিছু টেকনিক অবলম্বন করতে হবে। আপনার সর্বপ্রথম কাজ হবে সেটবেক প্লান দেখে কোনপাশে কতোটুকু জায়গা ছাড়া আছে তা বাদ দিয়ে পাইলিং লে আউট প্লান দেখে গ্রিড লাইন A এবং 1 বরাবর আড়াআড়ি সুতা টানিয়ে মাটাম চেক করা । 

অর্থাৎ দুই সুতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে একবাহু ৩ ফুট মার্কিং করুন অপর বাহু ৪ফুট মার্কিং করুন। তারপর অতিভুজ নিজ হাতে চেক করে নিন যদি অতিভুজ ৫ফুট হয় তাহলে মাটাম ঠিক আছে। তারপর যেকোন একপাশ থেকে ড্রইং এ উল্লেখিত মাপ অনুসারে যেভাবে আছে হুবহু সেভাবে সেট করা শুরু করতে হবে। সর্বপ্রথম পয়েন্ট দেওয়ার সময় একটু সময় নিয়ে করুন তাড়াহুড়ো করে করতে গেলে গুলিয়ে ফেলবেন। প্লামবব নিজের হাতে নিয়ে চেক করুন। যদি প্লামবব ধরার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে তবে মিস্তিরিদের ফলো করুন। মাপগুলো বার বার চেক করতে হবে। আপনার সাথে মিস্তিরির মিলে কিনা তা যাচাই করার জন্য কৌশলে মিস্তিরি কে ড্রইং ধরিয়ে দিয়ে নিজেই টেপ নিয়ে মেজারমেন্ট করবেন। সম্পুর্ণ লে আউট সম্পন্ন হলে পুনরায় চেক করে দেখতে হবে।কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক সংশোধন করে নিতে হবে।এটাকে_আপনি_কৌশলে_কার্যসিদ্ধি বলতে পারেন।

বাড়ি নির্মাণের লে আউট মুল্যত কি ?
যেমন কোন দর্জি যখন পোষাক তৈরী করে তখন কাপড় কাটার আগে কাপড়ের উপর একধরণের দাগ দিয়ে নেয়। পরে সেই দাগ অনুসারে কাপড় কাটে সেলাই করবার জন্য। এই কাপড় কাটবার আগে দাগ দিয়ে নেয়া কে ওই পোষাকের জন্য লে-আউট দেয়া বলা হয়। ঠিক তেমনি কাগজ়ে আকা ভবনের নকশাকে প্রকৃত মাপ জোপের মাধ্যমে জমিতে স্থানান্তর করাকে প্রকৌশলবিদ্যায় ভবনের লে-আউট দেয়া বোঝায়।

ভবনের নকশা, কাগজের উপর ছোট স্কেলে আকা থাকে।এখানে ডয়িং এর কাগজটিকে বাস্তব ভুমির ছোট সংষ্করণ বলা যেতে পারে। কাগজ়ে আকা নকশাটিকে প্রকৃত স্কেলে জমিতে চিহ্নিত করতে হয়, যাতে সহজেই প্রতিটি কলামের সঠিক অবস্থান, নির্মানাধীন ভবনের ওরিয়েন্টেশন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- ভবনটি সীমানার ভিতরে আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।

ড্রয়িং হলো প্রকৌশলীদের যোগাযোগের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। কোন ভবনের লে-আউট দেয়ার জন্য যে ড্রয়িং তৈরী করা হয় সেখানে সাধারনত a,b,c,d ও 1,2,3,4 এই দুই ধরণের গ্রীডলাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। a,b,c,d গ্রীড লাইনগুলো একে অপরের সমান্তরাল আবার 1,2,3,4 গ্রীড লাইনগুলোও পরষ্পর পরষ্পরের সমান্তরাল হয়ে থাকে। কিন্তু a,b,c,d গ্রীড লাইনগুলো 1,2,3,4 গ্রীড লাইনের সাথে সমকোণ তৈরী করে। এই দুই ধরণের গ্রীড লাইনের ছেদ বিন্দুটিতে সাধারণতঃ কলাম বা দেয়ালের অবস্থান করে থাকে।

লে-আউট দেয়ার প্রধান কাজ হলো ড্রয়িং থাকা উপরে বর্ণিত ঐ সমস্ত গ্রীডলাইনগুলোকে বাস্তব মাপজোপের মাধ্যমে প্রকৃত জমিতে স্থানান্তর করা। কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সেই কাজটি প্রকৌশলীরা করে থাকেন-

প্রথমে একটি বেসলাইন (Baseline) বা সীমারেখা নির্ধারণ করতে হয়। সীমারেখাটি সাধারণতঃ পার্শ্ববতী কোনো ভবন বা রাস্তার মধ্যরেখা (center line) এর সমান্তরালে একটি নির্দিষ্ট দুরুত্বে চিহ্নিত করা হয়।

বেসলাইনের সমান্তরাল করে ড্রয়িং এ অঙ্কিত বিভিন্ন গ্রীডলাইনগুলো (a,b,c,d) কে ভূমিতে স্থানান্তর করা হয়। কিছু অস্থায়ী বাঁশের খুটির সাহায্যে এই সমস্ত গ্রীডলাইনগুলোকে চিহ্নিত করা হয়।

এরপর যেকোন একটি সুবিধামত গ্রীডলাইনের (1,2,3,4 ) সাথে সমকোণে রেখে আরেকটি গ্রীডলাইন চিহ্নিত করা হয়।

একইভাবে লম্ব বরাবর যে গ্রীডলাইন পাওয়া গেল সেগুলো সমান্তরাল করে আগের মত আবার নতুন গ্রীডলাইন বসানো হয়।

সাময়িক বা অস্থায়ী খুটির বদলে কংক্রীটের খুটি ব্যবহার করে গ্রীডলাইনগুলোকে স্থায়ী করে রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে যেকোন প্রয়োজনে গ্রীডলাইনগুলো অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

লেভেল মেশিনের সাহায্যে রাস্তার চুড়ার তলের উপর ভিত্তি করে ভবনের প্লিন্থ লেভেল নির্ধারণ করতে হয়। প্লিন্থ লেভেলের চিহ্নটি এমন এক স্থানে রাখতে হয় যেখানে সহজে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে, সহজে দেখা যায় ও ভবন নির্মানের শেষ পর্যন্ত যেই স্থানের অস্তিত্ব থাকবে।

পরষ্পর লম্ব দুইটি গ্রীডলাইনের ছেদবিন্দু থেকে কলাম ও ফাউণ্ডেশনের সাইজ, অবস্থান এবং গভীরতা নির্ধারণ করা হয়।

কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরষ্পর লম্ব চারটি গ্রীডলাইনের দ্বারা আবদ্ধ বর্গক্ষেত্রের কর্ণের দৈর্ঘ বারবার পরীক্ষা করতে হয় যাতে উক্ত গ্রীডলাইনগুলোর মাঝে ৯০ ডিগ্রি থাকে। কারণ আমরা জানি একটি পূর্ণাংগ বর্গক্ষেত্রের কর্ণ দুইটি সবসময় সমান থাকে।

ভবনের লে-আউট দেয়া ভবন নির্মানের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আসলে গণিতের জ্যামিতি বিষয়ের একটি পরিপূর্ণ ব্যবহারিক ঘটনা। ভবনে লে-আউট দিয়ে কাজ করলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায় যেমনঃ

ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে ভুল হবার সম্ভাবনা কম হয়।

ভবন নির্মান কাজে ব্যবহৃত ফোরম্যান বা মিস্ত্রি সঠিক-সুন্দর ভাবে ও নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।

নির্মান কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে কলামের অবস্থান পূনঃপরীক্ষার জন্য স্থায়ী লে-আউটের প্রয়োজন হয়।

ভবনের নকশা বা আসল জমিতে কোন রকম সমস্যা থাকলে লে-আউট চলাকালীন সময়ে সংশোধন করা যেতে পারে।
 

1 comment:

  1. বিল্ডিং ডিজাইনে ফার ক্যালকুলেশন এবং সেটব্যাক রুল এ্যাপ্লাই করা বাধ্যতামুলক।
    FAR এবং Set-Back হিসেব করার উপায় সহজভাবে বোঝানো হয়েছে এই টিউটোরিয়াল সিরিজটিতে।
    টিউটোরিয়ালগুলো দেখতে ক্লিক করুন Learn With Rony

    ReplyDelete

Powered by Blogger.