দুই নাম্বারি ঠেকাতে আজই জমির মাপ শিখে নিন।

আমরা অনেকেই জমি মাপার পদ্ধতি জানি না। সাধারণত জমি মাপার সময় একজন আমিন বা সার্ভেয়ার অপর পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে দুই নাম্বারি করতে পারেন। আপনারা আমিন দ্বারা জমি মাপার সময় কিছু হলেও বুঝতে পারবেন। দুই নাম্বারি করা থেকে আমিনকে বিরত রাখতে পারবেন।

এ ছাড়া জমির মাপ জানা থাকলে জমি কেনার আগে ওই জমির পরিমাণ কত তা নিজে নিজে মেপে বের করা যায়।
জমি মাপার বিভিন্ন সূত্র রয়েছে। সুত্রগুলো জানা থাকলে আশা করি আপনাদের জমি মাপার সময় তা কাজে আসবে।
প্রথমেই ক্ষেত্রফল আকৃতির জমির মাপ কিভাবে করতে হবে এবং তা পরিমাপ এর পদ্ধতি।

দুই নাম্বারি ঠেকাতে আজই জমির মাপ শিখে নিন ।

জমি পরিমাপ পদ্ধতি।

প্রথমেই সুত্রগুলো জেনে নেয়া যাক- 
✓ক্ষেত্রফল = বাহু X বাহু  ।
কর্ন = ১ বাহু X ১.৪১৪ ।
পরীসিমা= ১ বাহু X ৪ ।
 
এখন যদি প্রশ্ন হয় একটি বর্গক্ষের বাহুগুলির দৈর্ঘ্য ১২০ লিংক করে হলে উহার ক্ষেত্রফল এবং জমির পরিমাণ বের কর।

তাহলে আমরা জেনেছি যে, ক্ষেত্রফল= বাহু X বাহু = ১২০ X ১২০= ১৪৪০০ বর্গলিংক (যদি ক্ষেত্রফলের একেকটি বাহু ১২০ লিংক হয়)।

এখন আমরা আগেই জেনেছি যে, ১ শতাংশ = ১০০০ বর্গ লিংক তাহলে জমির জরিমান।

(১০০০ বর্গ লিংক = ১ শতাংশ ) অথবা  ১ বর্গ লিংক = ১০০০ ভাগের ১ ভাগ।

১৪৪০০০ বর্গ লিংকে কত হবে?
 
সুতরাং ১৪৪০০০ বর্গ লিংকে ১০০০ দিয়ে ভাগ দিলে যা হবে তাই হচ্ছে তার ফল অর্থাৎ ১৪.৪০ শতাংশ হবে।

জমি মাপার সময় বিভিন্ন হিসাব নিকাশ-১।
 
জমি মাপার সময় যে সকল হিসাব নিকাশ আমাদের জানতে হবে এবং বুঝতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমেই জমির মাপের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন একক নিয়ে আলোচনা করব।
 
জমির শতাংশ হিসাব একক।
 
১ শতাংশ = ১০০০ বর্গলিংক।

১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গ ফুট।

১ শতাংশ = ১৯৩.৬০ বর্গহাত।

১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ।

১ শতাংশ = ৪০.৪৭ বর্গ মিটার।

আর ফুট সম্পর্কে আমরা সাধারণত সকলেই জানি। তেমনি বর্গহাত সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। গজ সম্পর্কে কমবেশি আমরা পরিচিত আছি। মিটার সম্পর্কে অনেকেই পরিচিত। প্রথমেই আমি মাপ নিয়ে আলোচনায় যেতে চাই।
মাপ হল কোন কিছুর পরিমান নির্নয় করা।
 
জমির মাপ সাধারণত তিন প্রকারে হতে পারে।
 
রৈখিক বা আর এফ টি বর্গ বা স্কয়ার ঘনফুট বা সিএফটি।
 
জমি মাপার যন্ত্রপাতি এবং তার ব্যাবহার।
 
পথমেই জমি মাপার জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমেই গান্টার শিকল পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
 
গান্টার শিকল পদ্ধতি।
 
এই শিকলের আবিষ্টাকারক হান্টারষ্কারক। এটা ৬৬ ফুট লম্বা এবং ১০০ টি সমান ভাগে বিভক্ত। প্রতি ভাগের দৈর্ঘ্য ০.৬৬ ফুট বা ৭০৯২ ইঞ্চি। প্রতি ভাগকে ১ লিংক বলে।

৮০ শিকল = ১ মাইল।
১০ শিকল = ১ ফালং।

ডায়াগনার স্কেল বা গান্টার স্কেল এটি একটি চার কোনা বিশিষ্ট তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি স্কেল। এটির চার পাশে ১০ টি ঘর বা কক্ষ থাকে প্রতিটি ঘরের মান ১০০ লিংক। ১৬”=১ মাইল স্কেলে এটি তৈরি করা হয়। এবং গান্টার চেইনর সাথে মিল আছে বলে একে হান্টার স্কেল বলা হয়।


আইভার অফসেট এটি একটি প্লাষ্টিকের তৈরি স্কেল এই স্কেলের সাথে গান্টার স্কেলের মিল আছে। এর দৈর্ঘ্য ২’’ এবং প্রস্ত .৫” (ইঞ্চি) এই স্কেলের সাহায্যে নকশার সংকোচিত দুরত্ব সহজে মাপা যায়। এটা ছাড়া অফনেট নেোয়ার ক্ষেত্রে এটি বিশেষ সুবিধাজনা। গুনে গুনে সংখ্যা হিসাব করা যায় বলে একে গুনে বলা হয়। ডিভাইডার বা কাটা কম্পাস এটি একটি জ্যামিতিক কম্পাস। এটির সাহায্যে নকশার সংকোচিত দুরত্ব নিয়ে ডাইগোনাল স্কেলে মাপ নেয়া যায় এবং দুরত্ব গুনে গুনে সংখ্যা বুঝা যায়।

খতিয়ান সংশোধন পদ্ধতি কী এবং কেন।

অনেক প্রয়োজনে আমদের খতিয়ান সংশোধন করতে হয়। আজকে আমি যে সকল কারণে খতিয়ান সংশোন বা পরিবর্তন করতে হয় তা আলোচনা করব।

১৫০ সালের জমিদারী উচ্ছেদ এবং প্রজাস্বত্ব আইনে খতিয়ান পরিবর্তন , পরিমার্জন সম্পর্কে কলা হয়েছে। খতিয়ান সংরক্ষনের দায়িত্ব কালেক্টরের। যে সকল কারণে খতিয়ানে সংশোধন করা যার তা নিচে আলোচনা করছি। জমি বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্থান্তর বা উত্তরাধীকারের ফলে জমির মালিকানা হস্তান্তরিত হলে তার জন্য নাম খারিজ করা হলে খতিয়ান সংশোধন হয়। সরকারকৃত জমি ক্রয়কৃত হলে নতুন খতিয়ান সংশোধন হয়।

জমি পরিত্যাগ বা বিলুপ্তি বা অর্জনের কারণে খাজনা মউকুফ হলে খতিয়ান সংশোধন হয়। একটি খতিয়ান তৈরী হলে যদি তাতে ভূল থাকে তাহলে তা সংশোধনের জন্য, যে ব্যাক্তি বা জমির মালিক সংশোধনের জন প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ স্থানীয় দেয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। দেয়ানী আদালত যদি মনে করে খতিয়ানে ভূল আছে তাহলে প্রয়োজনীয় শুনানী শেষে সংস্লীস্ট প্রমান পত্র বিশ্লেষন করে সংশোধনের আদেশ দিবেণ।

ভূমি পরিমাপের পদ্ধতি।

ভূমি পরিমাপ বা ভূমি জরিপ সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ বললেই চলে। আমদের বাসা বাড়িতে বা গ্রমের বাড়িতে যখন জমি পরিমাপ বা জরিপ চলে তখন আমরা তা বুঝি না বলে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

ভূমি জরিপকালে যে সকল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হল।

শিকল জরিপ।  
কম্পাস জরিপ।  
প্লেনটেবিল জরিপ।
থিয়োডোলাইট জরিপ।

শিকল জরিপ।

ভূমি জরিপের জন্য শিকল জরিপ সবচেয়ে সহজ। য়ে জায়গায় পরিপ করতে হবে তা কতকগুলো ত্রিভুজে ভাগ করে নিতে হয় এবং ত্রিভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য শিকল দিয়ে মাপ করা হয়। জ্যামিতিক ক্ষেত্রগুলির মধ্যে ত্রিভুজ অংক পদ্ধতি সর্র্বাপেক্ষা সহজঅ পুরো জায়গাটিকে সারি সারি ত্রিভুজে ভায করে নিতে হয়। ত্রিভুজের কোণগুলি ৬০ ডিগ্রির কর বা ১২০ ডিগ্রির বেশী না হয় তা দেখতে হবে। মাঠের মাঝামাঝি দিয়ে একটি বা দুটি মেরুদন্ড রেখা টেনে নেয়া যায়। এই মেরুদন্ড রেখার সালে প্রধান প্রধান ত্রিভুজগুলো আবদ্ধ থাকরে এবং এরপর বড় বড় ত্রিভুজগুলোকে আরো ছোট ছোট ত্রিভুজে বিভক্ত করতে হবে। এভাবে ই শিকল জরিপ সম্পন্ন করা হয়।
 
কম্পাস জরিপ।

কম্পাসের সাহায্যে যে জরিপ পরিচালিত হয় তার নাম কম্পাস জরিপ। এতে দুই ধরনের কম্পাস ব্যবহার করা হয়। এ কম্পাস দুটি হল প্রিজমেটিক কম্পাস এবং সার্ভেয়াস কম্পাস। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, রাস্তা, নদী এবং ধারাবাহিক রেখার নকশা প্রণয়ন কাজে প্রিজমেটিক কম্পাস ব্যাবহার করা হয়। আর বড় নদী বা সমুদ্র এলাকায় যখন বিশাল চর জেগে উঠে তখন তা নরম থাকে যে তার ওপর দিয়ে চলাফের করা যায় না। তখন কম্পাস জরিপের মাধ্যমে তার অবস্থান, সীমানা এবং আয়তন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে এ জরিপের বর্তমানে কোন ব্যবহার নেই বললেই চলে।

খতিয়ান কী ?

আমরা অনেকেই ‘খতিয়ান’ নাম এর সাথে পরিচিত কিন্তু এটা কি তা আমরা অনেকেই জানি না। প্রত্যেকটি এলাকায় বা প্রত্যেক মৌজায় জমি পরিমাপের জন্য মানচিত্র আছে এবং তার একটি দাগ নং আছে। প্রত্যেক মৌজায় প্রত্যেক প্রজার এক বা ততোধিক ভূমি জন্য একত্র্রে যে রেকর্ড সৃষ্টি কারা হয় তাকে খতিয়ান বলা হয়। ভুমি জরিপের মাধ্যমে খতিয়ান সৃষ্টি করা হয়। এগুলি ক্রমিক সংখ্যা দ্বারা সাজানো হয়। এই সংখ্যাকে খতিয়ান সম্বর দ্বারা সাজানো হয়। এই সংখ্যাকে খতিয়ান নম্বর বলে।

খতিয়ানের ক্রমিক নং বা খতিয়ান নম্বর জমির মালিকের নাম, পিতার বা স্বামীর নাম মালিকের অংশ বা মালিকের মোট জমির পরিমান দাগ নং বা যে দাগে জমিটি অবস্থিত উক্ত দাগে মোট জমির শ্রেনী তার মানে নাল বা উঁচু জমি বা বসত বাড়ি উক্ত দাগে মোট জমির পরিমাণ মোট জমির মধ্যে অত্র খতিয়ানের অংশ রাজস্ব প্রদেয় জেলার নাম বা যে জেলায় জমিটি অবস্থিত থানা বা উপজেলার নাম জে এল নাম্বার (জুরিসডিকশন লিস্ট) তৌজি নাম্বার মূলত আমরা খতিয়ান বলতে ভূমি মালকানার বিবরণকেই বলি। তাই সাবেক খতিয়ান এবং বর্তমান খতিয়ান পর্যালোচনা করলেই আমরা ভূমি মালিকানার ধারাবাহিকতা দেখতে পারব। মূলত খতিয়ান হতেই আমরা উক্ত ভুমির মালিক কখন কে ছিল বা বর্তমানে কে কে মালিক তা অনায়াসেই বের করতে পারব।

নামজারি বা মিউটেশন কী?
 
‘নামজারি বা মিউটেশন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জমি ক্রয়ের পর বা মালিকানা পরিবর্তন এর পর ক্রেতাকে করতে হয়। প্রথমেই কী কী কারণে ‘নামজারি বা মিউটেশন’করতে হয় নামজারি অর্থ মালিকানার পরিবর্তন। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভুমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে ভূমিস্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

বিক্রয়, দান, বিনিময় ইত্যাদির মাধ্যমে খতিয়ানভুক্ত জমি হস্তান্তর করা হলে উক্ত খতিয়ান হতে হস্তান্তরিত ভূমির পরিমাণ ওই খতিয়ান হতে বাদ দিয়ে হস্তান্তর গ্রহীতার বা যে ব্যক্তি জমি ক্রয় করেছেন বা ক্রেতা নামে খতিয়ান খুলে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একে ‘নামজারি বা মিউটেশন’ বলে। হস্তান্তরিত ভূমির প্রকৃত প্রজা কে এবং যার নিকট হতে খাজনা আদায় করা হবে তার জন্য স্বত্বলিপি বা খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। কাজেই নামজারি বা করলে সরকারি রেকর্ডে পুর্বের স্বত্বাধিকারীর নামই থেকে যাবে হস্তান্তরগ্রহীতার নাম অজ্ঞাত থেকে যাবে। তাই অন্তবর্তীকালীন রেকর্ড পরিবর্তন, সংশোধন এবং হালনাগাদকরণের প্রক্রিয়াকে নামজারি বলা হয়।

1 comment:

  1. আমার কাছে জমির হিসাবটা একটু জটিল ছিল কিন্তু এখন অনেকটা সহজ হয়েগেল, ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.