সিমেন্টের ক্লিংকার কি ?

আসলে ক্লিংকারই হচ্ছে সিমেন্ট । ক্লিংকারে জিপসাম মিশিয়ে গুড়ো করলেই সিমেন্ট হয়। জিপসাম মূলত মিলানো হয় সেটিং টাইম বাড়ানোর জন্যে। ক্লিংকারের কোয়ালিটি যদি ভালো না হয়, সে ক্ষেত্রে সিমেন্টের কোয়ালিটি ভালো করার তেমন সুযোগ থাকে না । বাংলাদেশে ক্লিংকার মাত্র দুটি ফেক্টরি বানায় ১) ছাতক সিমেন্ট ও ২) লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। অন্যান্য সিমেন্ট ফেক্টরি গুলো মূলত ক্লিংকার গ্রান্ডিং মিল।

ক্লিংকার কাকে বলে ।

সিমেন্ট ক্লিংকার তৈরির দুইরকম পদ্ধতি আছে।
(১) আদ্র পদ্ধাতি (Wet Process) ও (২) শুকনো পদ্ধতি (Dry Process)
আদ্র পদ্ধতিতে কাচামাল সমুহকে একটি বড় চৌবাচ্চায় পানি দিয়ে গুলানো হয় এবং কাদা বা কাই তৈরি করা হয় এবং তা শুকানো হয়। অপরদিকে শুকনো পদ্ধতিতে কাচামাল সমুহকে শুকনো অবস্থায় গুড়ো করে পাউডারের মতো মিশানো হয়। দুই পদ্ধতিরই নিজস্ব কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে।আদ্র পদ্ধতি অনেক সহজ একটি পদ্ধতি অপরদিকে শুকনো পদ্ধতিতে জ্বালানি খরচ অনেক বেচেযায়।
 
শুকনো পদ্ধতিতে সিমেন্ট ক্লিংকার প্রস্তুত পক্রিয়া।
এই পদ্ধতিতে কাচামাল শুকনো অবস্থায়একটি গ্রাইন্ডিং মিলে গুড়ো (পাওডার) করা হয়। এই গুডোটিকে ‘র-মিল’ বলে। র-মিল কে একটি মিকচার সাইলোতে (বেন্ডিং সাইলো) ঢুকানো হয় এই ব্লেন্ডিং সাইলোতে বাতাসের প্রেশারের মাধ্যমে বিভিন্ন কাচামাল নির্দিস্ট অনুপাতে মিশিনো হয়। তারপর এই মিশ্রনের মধ্যে সামান্য পরিমানে পানি মিশানো হয় যাতে পাওডার গুলো ছোটছোট দানাতে পরিনত হয় । পানি অবশ্যাই মিশ্রনের পরে দেয়া হয় এবং পানির পরিমান সাধারনত মিকচারের উজনের ১২% এর বেশী হয় না।

দানাগুলোকে একাওটি উত্তপ্ত কিলন মিলে ঢুকানো হয় । সাধারণত কিলন মিলের তাপমাত্র ১৪৫০° সেঃ থাকে। কি্লন মিলের উত্তাপে মিশ্রনের ২০-৩০ ভাগ তরল আকার ধারন করে এবং এই তরল ও দানা গুলো তাপের মধ্যে এক জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্য করে ও দানাদার ক্ষুদ্র বলের আকার ধারনে করে , বল গুলোর পরিধি সাদারণত ২ থেকে ২৫ মিঃমিঃ হয়ে থাকে। এই বলগুলোকেই আমরা ক্লিংকার বলি।


আদ্র পদ্ধতিতে সিমেন্ট ক্লিংকার প্রস্তুত পক্রিয়া।
আদ্র প্রক্রিয়ায়, যদি কাচামাল হিসেবে চক ব্যবহার করা হয়, আহলে প্রথমে এটি সূক্ষ্মভাবে ভেঙে একটি ওয়াশ মিলে পানিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওয়াশ মিল একটি বৃত্তাকার চৌবাচ্চা যার মাঝে একটি ঘূর্ণায়মান বাহুর মত যন্ত্র আছে যা শক্ত পদার্থকে গলিত পদার্থে পরিণত করে। তেমনিভাবে আরেকটি ওয়াশ মিলে, কাদামাটিও ভেঙে পানির সাথে মিশে যায়।অতঃপর দুটি মিশ্রণটি পাম্প করে একটি ছাকনির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করে পূর্বনির্ধারিত অনুপাতে মিশিয়ে কতগুলো ট্যাঙ্কয়ে জমাকরা হয়। এই ট্যাংক গুলোকে”স্লারি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক” বলে।

আর যখন কাচামাল হিসাব চুনার পাথর ব্যবহার করা হয়, প্রথমে এটি ক্রাশার মেশিনে ভেংগা হয় এবং তারপরে এগুলোকে একটি বল মিলে ঢুকিয়ে গুরোকরা হয় এবাং একই সময় তার সাথে পূর্বনির্ধারিত অনুপাতে কাদাও মিশিয়ে দেয়া হয়। যা পরবর্তি ধাপে স্লারি স্টোরেজ ট্যাঙ্কগুলিতে পাম্পকরে জমাকরা হয়।
স্লারি ট্যাংকে যে কাদা থাকে তা অত্যান্ত ঘন ও স্থিতিস্থাপক হয় , যা দেখতে অনেকটা ক্রিমের মতো । এতে প্রায় ৩৫ থেকে ৫০% পর্যন্ত পানি মিশানো থাকে। সিমেন্ট মিলে এগুলোকে “স্লারি” বলা হয়।
স্লারি গুলোকে পাম্পের মাধ্যেমে একটি ঘূর্ণায়মান বয়লারের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় যাকে কিলন মিল বলে। এটি একটি বড় ইস্পাত সিলিন্ডার যার ব্যাস 8 মিটার থেকে 230 মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ইস্পাত সিলিন্ডারটি ধীরে ধীরে তার অক্ষাংশের উপর ঘুরে এবং এটি সামান্য অনুভূমিক দিকে ঝুঁকানো থেকে। কিলন মিলের উপরের প্রান্তে তাপ তৈরি করা হয় যা নিচের দিকে প্রবাহিত হয়।কিলন মিলের ভিতরে তাপমাত্রা প্রায় 1450 ° সে।তাপ তৈরির জন্যে সাধারনত কয়লা ব্যাবহার করা হয় এক টন ক্লংকার তৈরিতে 220 কেজি কয়লা ব্যবহৃত হয়।কয়লা ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হয় কারন কয়লাথেকে উৎপন্ন ছাই কনা (ফ্লাই এস)ক্লিংকারের মিশে এর গুনাগুনে প্রভাব ফেলে। তবে বাংলাদেশে কিলন মিলে গ্যাস ব্যাবহার করা হয়।
স্লারি গুলো তাপের মধ্যে এক জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্য করে ও দানাদার ক্ষুদ্র বলের আকার ধারনে করে , বল গুলোর পরিধি সাদারণত ২ থেকে ২৫ মিঃমিঃ হয়ে থাকে। এই বলগুলোকেই আমরা ক্লিংকার বলি। 
 
Rreinforced Concrete.pdf

No comments

Powered by Blogger.