বাড়ির নির্মাণে নকশার প্রয়োজনীয় বিষয় ও সতর্কতা সমূহ পর্ব - ১।

সাইট বা প্লটে লে আউট দেওয়ার সাধারন সতর্কতা সমূহ।

লে- আউট দেওয়ার সময় যদি সামান্য পরিমাণ ভুল হয়, তাহলে ফুটিং , পাইল, বা কলামও সামান্য পরিমাণ যে কোন দিকে সরে গিয়ে বিল্ডিং এর আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে। লে-আউট দেওয়ার সময় জমির সীমানা ঠিক আছে কিনা সেটা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
সাইট বা প্লটে পাইলিং করার সময় সাধারন সতর্কতা সমূহ।

ডিজাইন লে-আউট অনুযায়ী পাইল গুলোর অবস্থান নির্ণয় করতে হবে। এক্ষেত্রে সেন্টার (মাঝ বরাবর)  ঠিক রেখে পাইলিং করতে হবে। এছাড়া কলামের অবস্থান ঠিক থাকবে না। আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরণের পাইল ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ 
১। কাস্ট ইন সিটু পাইল 
২। প্রিকাস্ট পাইল।

বাড়ি নির্মাণে নকশার প্রয়োজনীয় বিষয় এবং সতর্কতাসমূহ পর্ব - ১।

ইটের গাঁথুনির কাজে সাধারণ সতর্কতা সমূহ।

ইটের গায়ের মাঝখানে সামান্য ফাঁকা থাকে। যার মধ্যে ইট কোম্পানির নাম লেখা থাকে। তাকে বলা হয় ইটের মার্ক বা Frog Mark । ইটের গাঁথুনির কাজ করার সময় ইটের মার্ক বা Frog Mark কে উপরের দিকে রাখতে হবে। এক দিনে ৪.৫০ ফুটের বেশি উচ্চতায় গাঁথুনি করা যাবে না। গাঁথুনির দুই ইটের মাঝখানে ভালোভাবে মশলা দিতে হবে। গাঁথুনির এক দিন আগে ইট গুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। যাতে করে মশলা থেকে ইট পানি শোষণ করে নিতে না পারে। 

সাইট বা প্লটে মাটি কাটার সময় সাধারন সতর্কতা সমূহ।

মাটি কাঁটার পূর্বে সাইটের আশেপাশে কোন উঁচু বাড়ি বা পুরাতন স্থাপনা থাকলে সেগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করতে হবে। যেন মাটি কাঁটার ফলে উঁচু বাড়ি বা পুরাতন স্থাপনার কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। এজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে সাইটের অবস্থা অনুযায়ী বিল্লি (বাঁশ বা কাঠের এক ধরনের বেড়া) বা শিট পাইলিং ব্যবহার করতে হবে।

ফাউন্ডেশন এর ঢালাই কাজের সময় সতর্কতা।


ফুটিং বা কম্বাইন ঢালাইয়ের পূর্বে অনেক সময় গর্তের মধ্যে পলিথিন বিছিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। যাতে করে ঢালাইয়ের পানি বাহিরে বের না হয়ে যায়। কিন্তু গর্তের মধ্যে পলিথিন ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ পলিথিন মাটি ও ফাউন্ডেশনের মধ্যে সংযোগের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পলিথিন এমন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয় যা হাজার বছরেও পচেঁ মাটির সাথে মিশিয়ে যায় না।  এজন্য ফাউন্ডেশনের কাজে পলিথিন ব্যবহার না করাই ভালো। এতে করে ভূমিকম্পে ভবন উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাটারিং তৈরি করার সময় সাধারন সতর্কতা সমূহ।

নির্মাণ কাজে সাটারিং খুবই গুরুত্বপূর্ন  বিষয়। বাংলাদেশে সাধারণত তিন প্রকার সাটারিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেগুলো হল- কাঠ, বাঁশ এবং ষ্টীল সাটারিং। একই সাটার একাধিক বার ব্যবহারের ফলে সাটারের ভার বহন ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে ঢালাইয়ের পর সাটার ভেঙ্গে পরে যেতে পারে। এবং এজন্য বিশাল পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে। ঢালাইয়ের পর যাতে সাটারের ভেতর থেকে কংক্রিটের পানি বের না হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কংক্রিটের পানি বের হয়ে যায়, তাহলে কংক্রিটের বন্ড (বন্ধন) শক্তিশালী হবে না। ঢালাইয়ের সময় সাটারিংয়ের উপর পলিথিন ব্যবহার করতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে কাঠের প্লেনশিট ব্যবহার করে তার উপর চাটাই বিছিয়ে দিতে পারেন। ছাদের সাটারিং কমপক্ষে ২১ দিন রাখতে হবে।

কলাম ঢালাই করার সময় কাজের সতর্কতা সমূহ।

প্রতিটি কলামের উচ্চতা সাধারণত ১০ ফুট হয়ে থাকে। ঠিকাদার দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য রাজমিস্ত্রিদের এক সাথে ৯ ফুট কলাম ঢালাই করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। দুই ধাপে কলাম ঢালাই করার নিয়ম। প্রথমে ধাপে ৪.৫০ ফুট এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪.৫০ ফুট ঢালাই করতে হবে।

ছাদ ঢালাই করার সময় কাজের সতর্কতা সমূহ।

 ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পানি, সিমেন্ট, বালি(বালু), খোয়া (ইটের ছোট ছোট টুকরো)  বা পাথরের টুকরো এবং পাশাপাশি রডের গুনগত মান ভালো হতে হবে। দানাদার বালি (বালু) যার FINENESS MODULUS বা FM = 2.5 হতে হবে। বালিতে মিশ্রিত অপ্রয়োজনীয় ময়লা থাকলে ধুয়ে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। খোয়া বা পাথরের টুকরো বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। তবে ত্রিকোণাকার খোয়া বা পাথর এর পরিমাণ বেশি থাকলে ভালো হয়। খোয়া ব্যবহারের পূর্বে ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। যাতে করে মশলা থেকে খোয়া পানি শোষণ করতে না পারে। কংক্রিটের মিশ্রণে পানি, বালি, সিমেন্ট ও খোয়ার অনুপাত যেন সঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঢালাই কাজে অবশ্যই খাবারের উপযোগী পানি ব্যবহার করতে হবে। পানিতে কোন ধরনের ময়লা, আবর্জনা থাকলে কংক্রিটের মিশ্রণ ভালোভাবে যুক্ত হবে না। পানিতে লবনের পরিমাণ থাকলে কিছু দিন পর তা ভেঙ্গে পড়ার বা প্লাস্টার খসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্লাস্টারিং এর কাজের সময় সতর্কতা সমূহ।

প্লাস্টারের থিকনেস বা পুরুত্ব ১.৫ ইঞ্চির বেশী হওয়া যাবে না। প্লাস্টারের পূর্বে  ইটের গাঁথুনি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।  এর পর ইটের দেয়াল বা গাঁথুনি, সিলিং ভালো করে পানি দিয়ে সম্পূর্ণরূপে ভিজিয়ে নিতে হবে। যাতে প্লাস্টার থেকে ইটের দেয়াল পানি শোষণ করে নিতে না পারে।

রড বাইডিং বা রড বাঁধার কাজের সময় সতর্কতা সমূহ।

ডিজাইন অনুযায়ী রড বা ষ্টীল বাইন্ডিং করতে হবে। দুইটি রডের মাঝখানে যেন ডিজাইন অনুযায়ী ফাঁকা রাখা হয়। ফাঁকা কম বা বেশি হওয়া যাবে না। ক্লিয়ার কাভার সঠিক রাখতে হবে। অনেক সময়  লেবার বা মিস্ত্রির পায়ের ধাক্কায় ব্লক গুলো সঠিক অবস্থান থেকে যেন সরে না যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুইটি রডের জালি বা নেট যেন সঠিক দুরত্বে থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.